খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু
  মধ্যরাতে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ
  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তেরখাদার চাষিরা

তেরখাদা প্রতিনিধি

তেরখাদা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ঘের মালিকেরা চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিংড়ির ঘেরে বিষপ্রয়োগ, লুটসহ নানা কারনে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন ঘের মালিকেরা। এরকম চলতে থাকলে এ উপজেলার চিংড়ি খাত অচিরেই বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন চিংড়ি চাষিরা।

জানা গেছে, চিংড়িতে অধিক মুনাফা অর্জিত হওয়া এক সময় এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে দিন মজুর থেকে শুরু করে ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা ঘের কেটে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। যাদের জমি নেই তারা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে পুঁজি বিনিয়োগ করতে থাকেন। সাবলম্বী হতে শুরু করেন। দিনমজুর পরিবারের সদস্যরা। তবে বর্তমানে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা ঘেরে বিষ দেওয়া ও চিংড়ি চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চিংড়ি চাষিরা এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছেন।

আরো জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষের পাশাপাশি ইরি ও বোর ধানের চাষ করা হয়। উৎপাদিত মাছ ও ধান থেকে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে অর্থোপার্জন করেন কৃষকরা। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। ২০২১ সালের বন্যায় উপজেলার অনেক ঘের পানিতে ভেষে যায়। এতে ঘের মালিকদের প্রচুর পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়।

স্থানীয় ঘের মালিকরা জানান, চিংড়ি চাষ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মাছ চাষ করেছেন তারা। প্রতি মৌসুমেই প্রচুর পরিমান মুনাফা অর্জন করতেন ঘের মালিকরা। তখন চিংড়ি ঘেরে কোন নৈশ প্রহরীকে পাহাড়া দেয়া লাগত না। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। তারা রাতের আধারে চিংড়ি ঘেরে গিয়ে ঘেরের পানিতে এক প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করে সব চিংড়ি লুট করে নিয়ে যান। আবার অনেকে ঈর্ষাপরায়ন হয়ে অন্যের ঘেরে কীটনাশক দিয়ে রেনুপোনাসহ লাখ-লাখ টাকার চিংড়ি ধ্বংস করে দেন। এভাবে প্রতি বছরই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ফলে অসংখ্য ঘেরমালিক চিংড়ি চাষ থেকে সরে দাড়িয়েছেন।

উপজেলার বলরধনা এলাকার জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, দুর্বৃত্তরা রাতের আধারে আমার ঘেরে বিষ দিয়ে চিংড়ি মাছ চুরি করে নিয়ে যায়।

একই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ ঘের মালিক সুরাজ বিশ্বাস, শিমুল বিশ্বাস ও অংশ রায় জানান, চিংড়ি চাষের যোগ্য করে তুলতে আমরা আমাদের ঘেরে লাখ-লাখ টাকা খরচ করেছি। চিংড়ির রেনু পোনা কেনা ও খাবার দিয়ে বড় করে তুললেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। দুর্বৃত্তরা রাতের আধারে আমাদের ঘেরে বিষ দিয়ে সব চিংড়ি মেরে ফেলে আমাদের সর্বশান্ত করে দিয়েছে।

তারা আরও বলেন, ঘের থেকে চিংড়ি চুরি, ঘেরে বিষ দিয়ে চিংড়ি মেরে ফেলা সহ নানা কারনে লাভ তো দুরে থাক আসল টাকাই ঘরে তুলতে পারছে না অনেকে। অনেকে জমি বন্ধক দিয়ে, এমনকি জমি বিক্রি করে মহাজনদের দেনা পরিশোধ করেছেন। এসব কারনে বর্তমানে চাষীরা চিংড়ির পরিবর্তে সাদা মাছের পোনা চাষের দিকে ঝুকছেন।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, তেরখাদায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ৭ হাজারের মত চিংড়ি ঘের ছিল। কিন্তু বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজার চিংড়ি ঘেরে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। আড়াই হাজার ঘেরে চিংড়ি মাছের পরিবর্তে সাদা মাছ চাষ হচ্ছে। এছাড়া অনেক ঘের পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জামান বলেন, যারা চিংড়ি চাষ করেন তাদেরকে আমরা নানা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রায়ই ঘেরে বিষ প্রয়োগ ও চুরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের সতর্ক থাকতে হবে।

খুলনা গেজেট/এমএনএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!